দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলাকে বৈষম্যহীন দুর্নীতিমুক্ত মডেল এলাকা হিসাবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ঢাকা-১ আসনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। বলেছেন, বিগত সময়ে ইচ্ছা থাকলেও অনেকেই আমাকে ভোট দিতে পারেননি। আমি তাদের বলব, এবার ভয়ের কিছু নেই। নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে ভোট দেবেন। লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে জয়যুক্ত করে সংসদে পাঠালে তিনি এলাকার মানুষের ইচ্ছা-আকাক্সক্ষা পূরণে কাজ করবেন। নির্বাচিত হলে দোহার-নবাবগঞ্জে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন। প্রবাসী পরিবার পাবে নিরাপত্তা। নারী ভোটারদের আর মাটির চুলায় রান্না করতে হবে না। গ্যাস যাবে ঘরে ঘরে। বিলুপ্তপ্রায় তাঁতশিল্প তিনি আবার ফিরিয়ে আনবেন। মানুষের সেবায় নিজেকে সমর্পণ করবেন। বক্তব্যের একপর্যায়ে ভোটাররা দুহাত তুলে তার জন্য দোয়া করেন। তারা সালমা ইসলামের বিজয় কামনা করেন।
সোমবার নতুন বছরের প্রথম প্রহরে দোহার-নবাবগঞ্জের সব সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর মধ্য দিয়ে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেন। এদিন দুপুরে জাতীয় পার্টির উদ্যোগে তিনি দোহার উপজেলার রাইপাড়া ইউনিয়নের পালামগঞ্জ এলাকার ফুলতলা মাঠে নির্বাচনি সভা ও উঠান বৈঠক করেন।
এ সময় সালমা ইসলাম বলেন, আমি দোহার-নবাবগঞ্জের প্রতিটি মানুষকে সম্মান করতে চাই। শাসন-শোষণ নয়, সেবা করতে চাই। আপনাদের ভোটে ঢাকা-১ আসনে এমপি নির্বাচিত হলে আমি সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে একটি সমৃদ্ধ এলাকা গড়ে তুলব। এলাকার তাঁতি, কৃষক, শ্রমিক ও প্রবাসীদের নিরাপত্তা এবং কল্যাণে কাজ করব। আমার নিজের কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আপনাদের কল্যাণে নিজেকে সমর্পণ করাই লক্ষ্য। এ সময় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীসহ উপস্থিত নারী, পুরুষ সবাই মিলে ‘সালমা ইসলাম এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার সঙ্গে’ স্লোগানে নির্বাচনি সভাকে আনন্দমুখর করে তোলেন। তারা আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে সালমা ইসলামকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলাম উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, সারা দেশে দোহার ও নবাবগঞ্জ প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হিসাবে ব্যাপক পরিচিত। মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই এলাকার অসংখ্য মানুষ চাকরি করছেন। কথা দিচ্ছি, আমি নির্বাচিত হলে প্রবাসীদের যে কোনো সমস্যায় এগিয়ে আসব। সরকারিভাবে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের সহায়তা করা হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যার সমাধানে সহায়তা করব।
তিনি বলেন, দোহার উপজেলার তাঁতশিল্প সারা দেশে এক সময় সমাদৃত ছিল। বর্তমান সময়ে এ তাঁতশিল্প অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে। ফলে তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলো আর্থিক সমস্যায় আছেন। আমি কথা দিচ্ছি, এমপি নির্বাচিত হলে দোহার ও নবাবগঞ্জের তাঁতশিল্পের বিকাশে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে এই শিল্পের উন্নয়ন এবং শিল্পের সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলোর আর্থিক সমস্যার সমাধানে কাজ করব।
দোহারবাসীর উদ্দেশে সালমা ইসলাম আরও বলেন, আপনারা জানেন পদ্মার ভাঙ্গন রোধে আমি কাজ করেছি। এছাড়া প্রতিবছর দোহার-নবাবগঞ্জের হতদরিদ্র পরিবারগুলোর মুখে হাসি দেখতে তাদের সঙ্গে ধর্মীয় উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে বিভিন্ন সহায়তার বিষয়টিও আপনারা অবগত আছেন। আগে যেভাবে আপনাদের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও একটি পরিবারের মতো থাকতে চাই।
তিনি বলেন, আমার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের আদর্শ ধারণ করে আপনাদের সঙ্গে নিয়ে এ অঞ্চলে প্রতিটি ভালো কাজে আগাতে চাই। আপনাদের উন্নয়নে ও কল্যাণে বিগত সময় যেমন ছিলাম, আগামী দিনেও তেমনি পাশে থেকে কাজ করতে চাই। আমাকে আপনাদের স্বজন মনে করে আর একবার সেবা করার সুযোগ দিন। সরকারের পাশাপাশি নিজস্ব তহবিল থেকে দোহার-নবাবগঞ্জের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিতে কাজ করব।
এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সালমা ইসলাম বলেন, বিগত সময়ে ইচ্ছা থাকলেও অনেকেই আমাকে ভোট দিতে পারেননি। আমি তাদের বলব, এবার ভয়ের কিছু নেই। আপনার ভোট আপনি দেবেন। কেউ আপনাকে বাধা দিলে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ নির্বাচন কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক জানাবেন। কোনো অপশক্তি ভোটের বিষয় অহেতুক হস্তক্ষেপ ও ভয় প্রদর্শন করলে সবাই মিলে একসঙ্গে প্রতিবাদ জানাবেন। কোনো ব্যক্তির কারণে নির্বাচনকে বিশ্বের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না।
তিনি বলেন, আসুন উৎসবমুখর পরিবেশে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট প্রদানের মাধ্যমে দোহার-নবাবগঞ্জকে একটি কল্যাণমুখী অঞ্চল হিসাবে গড়ে তুলি। দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলাকে একটি বৈষম্যহীন দুর্নীতিমুক্ত এলাকা হিসাবে গড়ে তুলতে চাই আমি। যেখানে কোনো মানুষ নির্যাতিত হবে না। অপমানিত হবে না। ভয় থাকবে না।
এ সময় তিনি আরও বলেন, নিজেদের অধিকারের স্বার্থে এবং এই এলাকার সবার উন্নয়নের স্বার্থে আপনাদের সচেতন হতে হবে। সোচ্চার হতে হবে। কথা দিচ্ছি, আমাকে ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করলে এলাকাকে সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যুমুক্ত আলোকিত অঞ্চল হিসাবে উপহার দেব। আমার স্বামী নুরুল ইসলামও আজীবন ন্যায়ের পক্ষে কাজ করেছেন। কোনো ব্যাংক লুটপাট বা বিদেশে সম্পদ করেননি। একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে যা করেছেন দেশ ও জনগণের কল্যাণেই করেছেন। আমি তার দেখানো পথ অনুসরণ করব।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এবারের নির্বাচন হবে অবাধ ও সুষ্ঠু। জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। সব পর্যায়ে সরকারি প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে এমনটাই আশাবাদী।
এদিন বিকালে দোহারের কুসুমহাটি ইউনিয়নে বাংলাবাজারে আয়োজিত নির্বাচনি সভায় সালমা ইসলাম বলেন, দোহারের মানুষের মরণফাঁদ পদ্মার ভাঙন। চলমান কাজের সঙ্গে বাকি কাজ সমাপ্ত করার সব উদ্যোগ নেওয়া হবে। দোহার-নবাবগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার যাতায়াতের সড়কগুলো আরও প্রশস্তকরণসহ সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে। এ অঞ্চলে মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসনকে গতিশীল করে তোলা হবে।
এ সময় ঢাকা-১ আসনে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের সঙ্গে নবাবগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি জুয়েল আহমেদ, জাতীয় পার্টির নেতা মশিউর রহমান, নবাবগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, বোরহান হোসেন, নাজিম আহমেদ, দোহার উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হায়দার ব্যাপারী, সাধারণ সম্পাদক জানে আলম, ডা. আলাউদ্দিন আল আজাদ, মহিউদ্দিন মাতব্বর, গিয়াস উদ্দিন, মাসুদ মাঝি, মো. মানিক, মিলন হোসেন, মিল্লাত হোসেন, বাবুল হোসেন, নারী নেত্রী আসমা আক্তার রুমি, আইরিন গমেজ, নাজমা আক্তার, নজরুল ইসলাম, মনির হোসেনসহ দোহার উপজেলা জাতীয় পার্টি, মহিলা পার্টি ও ছাত্র সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।