বৃহস্পতিবার কারখানায় বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল যাচ্ছে; তাদের মতামতের ভিত্তিতে উদ্ধার অভিযান শুরু করার কথা বলছে ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসন।
দিনভর লুটপাট শেষে রোববার রাতে যখন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রূপসীতে গাজী টায়ারসের কারখানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়, তখন সেখানে এসে নিখোঁজ হন মো. আমান উল্লাহ (২১)৷
তারপর থেকে তিন দিন ধরে ছেলের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে কারখানা এলাকায় ঘুরছেন আব্দুল বাতেন ও রাশিদা বেগম দম্পতি৷
চার ভাই-বোনের মধ্যে সেজো আমান স্থানীয় একটি ব্যাটারি তৈরির কারখানায় কাজ করতেন৷ পরিবারের সঙ্গে তারাব বিশ্বরোড এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন এ তরুণ৷
আমানের খোঁজ পেতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বেশ কয়েকটি হাসপাতালে খোঁজ করেছেন পরিবারের সদস্যরা৷ কোথাও খোঁজ পাননি৷
আগের তিন দিনের মত বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকেও কারখানাটির ফটকের সামনে রাশিদা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি ‘কারখানার ভেতরে কারও লাশ পাওয়া গেছে কি-না’ জানতে চান৷
ইতিবাচক উত্তর না পেয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে এ বৃদ্ধা বলেন, “চাইর দিন ধইরা তারা করতেছে কী? কত মানুষ দেহি বড় বড় খালি গাড়ি লইয়া আহে আর যায়। তারা কি কিচ্ছু করে না? আমার পোলাডারে তো পামুই না জানি, কঙ্কালটা পাইলেও তো আত্মাডা ঠান্ডা হইতো৷ হেইডাও তো দিতেছে না৷”
সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী রোববার ভোরে গ্রেপ্তারের পর দুপুর থেকে তার মালিকানাধীন গাজী টায়ারসের কারখানাটিতে লুটপাট চালায় আশপাশের শত শত মানুষ। পরে রাতে তারা কারখানার মূল ভবনটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। প্রায় ৪০ ঘণ্টা ধরে জ্বলে সেই আগুন। এরই মধ্যে ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। প্রতিদিনই নিখোঁজদের খোঁজে কারাখানা চত্বরে ভিড় করছেন স্বজনরা।
দীর্ঘ এই সময়েও কারখানাটির ভেতরে উদ্ধার অভিযান শুরু না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। তোলেন নানা প্রশ্নও।
তবে ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসন বলছে, আগুনে ভবনটি ‘অনিরাপদ হয়ে পড়েছে’, তাই বৃহস্পতিবার বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বুধবার সকাল থেকে উৎসুক জনতার পাশাপাশি স্বজনদের কারখানার সামনে ভিড় না করার অনুরোধ জানান নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা৷
এ অনুরোধে অনেক স্বজন বিরক্তি প্রকাশ করেন৷ ক্ষোভও ঝাড়তে দেখা যায় কাউকে কাউকে৷
নিখোঁজ আমানের মা রাশিদা বেগম বলেন, “আমার পোলা পাইতেছি না, আর আমারে কইতেছে, ভিত্রে কেউ নাই, যান গা৷ নিখোঁজ মানুষরে দিতারে না, খালি মানু খেদাইয়া দেয়৷ বাইর কইরা দেয়৷ তারা তো কিছু কয় না৷ বাবা, তোমরা তো ভিত্রে যাও, আমার বাবার খবরডা লইও৷”
কিন্তু কেউ ভেতরে যেতে পারছে না; ফলে রাশিদা বেগমও আর ছেলের কোনো খোঁজ পাননি।